মানুষের জীবনধারাকে স্বাচ্ছন্দ্যময় করে তুলতে
প্রতিবছরই নতুন প্রযুক্তি পণ্য বাজারে আসে। আর এদের মধ্যে খুব অল্প ক’টিই মানুষের মনে দাগ কাটে, টিকে থাকে বছরের পর বছর।
এ বছর কি তেমনই কোন বৈপ্লবিক প্রযুক্তির সংস্পর্শে
আসবে পৃথিবী?
উত্তর দিয়েছে, বিখ্যাত মার্কিন পত্রিকা দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল। পত্রিকাটির ভাষায়: প্রচলিত
‘সায়েন্স ফিকশন’ ধারণা এবছর হয়ে যাবে ‘সায়েন্স ফ্যাক্ট’! প্রযুক্তিগত উত্কর্ষতায়
২০১৬ সাল আগের সবকিছুকে ছাপিয়ে যেতে পারে বলে পত্রিকাটির অভিমত। চলতি বছরের এমন কয়েকটি
সম্ভাব্য বৈপ্লবিক প্রযুক্তি ও যন্ত্র নিয়ে এই আয়োজন।
সাউন্ডওয়াল : যারা মনে করেন, শিল্প শুধু চোখে দেখার জিনিস, সাউন্ডওয়াল তাদের ধারণাকে ভুল প্রমাণে যথেষ্ট। আধুনিক প্রযুক্তির এ
ক্যানভাসে শুধু শৈল্পিক কোন চিত্রকর্মই ভাসবে না, সঙ্গে বাজবে চিত্রশিল্পীর বেছে নেয়া গান। ওই গানের শব্দে
চিত্রকর্মের সৌন্দর্য অনন্য মাত্রা পাবে, তাতে সন্দেহ নেই।
বর্তমানে সাউন্ডওয়ালের সীমিত একটি সংস্করণ বাজারে
এসেছে। প্রখ্যাত শিল্পী ব্রুস স্প্র্রিংস্টিনের একটি প্রিন্ট ও তার নিজের বেছে
নেয়া ধারালো কণ্ঠের কয়েকটি গান থাকবে সাউন্ডওয়ালে। দাম পড়বে ৩ হাজার ৫০০ মার্কিন
ডলার (প্রায় পৌনে তিন লাখ বাংলাদেশি টাকা)।
ডেভিয়ালেট ফ্যান্টম ওয়্যারলেস সাউন্ড সিস্টেম :
সাধারণ কোন প্রযুক্তিকে অসাধারণ কিছুতে পরিণত করার জন্য ডেভিয়ালেট অনেক বছর ধরেই
খ্যাত। দ্য ফ্যান্টম এ ধরনেরই অসাধারণ কিছু। দেখতে এ যন্ত্রটা অনেকটা বিশ্বখ্যাত ‘সাইয়েন্স ফিকশন’ চলচ্চিত্র ‘স্টার ওয়ার্সে’র ‘ডেথ স্টার’-এর মতো। ফ্যান্টম ঘরের যেকোন স্থানে রাখলেই পুরো ঘরজুড়ে শব্দের ঝঙ্কার শোনা যাবে। এর মূল্য ১৪০০ মার্কিন
ডলার (১ লাখ ৯ হাজার টাকা)।
অনায়াসেই লিভিং রুমের অসাধারণ এক অনুষঙ্গ হয়ে উঠতে
পারে এটি।
ল্যান্ট্রনিক্স য্যানো কোয়াডকপ্টার : ছোট
কপ্টার ও কোয়াডকপ্টার নতুন কিছু নয়।
তবে ল্যান্ট্রনিক্স য্যানো কোয়াডকপ্টারের বিশেষত্ব
হচ্ছে,
এর ছোট্ট আকার। এছাড়া সাধারণ একটি
অ্যাপের সাহায্যে একে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। সেন্সরের মাধ্যমে কোয়াডকপ্টার বাধা শনাক্ত করে
তা এড়িয়ে চলতে পারে। আধুনিক খেলনা হিসেবে যে কাউকে এটি আকর্ষণ করার ক্ষমতা রাখে।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি :এ হলো কাল্পনিক বাস্তবতা। আপনি যেমনটা ভাববেন, বাস্তবে ঠিক তেমনই অনুভূত হবে। মানুষ অনেক কিছুই কল্পনা করে, আর ভাবে,
‘ইশ! এমন যদি সত্য হতো!’ মানুষের এমন কল্পনাকে বাস্তবতার সংস্পর্শ পাইয়ে দেয়ারই আয়োজন ভার্চুয়াল
রিয়েলিটি। এ বছর অবশেষে ভার্চুয়াল বাস্তবতা ‘বাস্তব’ হয়ে
দেখা দিবে। বহু কাঙ্ক্ষিত অকুলাস রিফট হেডসেট আসছে এবার। এর পরেই আসছে এইচটিসি’র ভাইভ,
সনি’র প্লে-স্টেশন
ভিআর। অত্যাধুনিক সেন্সর ও ইমেজিং প্রযুক্তির এসব হেডসেট কানে দিয়ে আপনার মনে হবে
আপনি বোধহয় কল্পনার জগতে আছেন।
গেমস ও বিভিন্ন যুদ্ধ-লড়াইয়ের কাল্পনিক জগত্ হবে এ
প্রযুক্তির সবচেয়ে বড় আকর্ষণ।
এছাড়া ৩৬০ ডিগ্রি ভিডিও ও অ্যাপসের কারণে আপনি এ বছর
কাল্পনিক বাস্তবতার অনেক কাছে চলে আসবেন। মনে হবে সব টিকেট বিক্রি হয়ে যাওয়া কোন
কনসার্টের একেবারে সামনের সারিতে আছেন, কিংবা ঘরে বসে উপস্থিত আছেন কোন মিটিং-এ!
বুদ্ধিমান মেসেজিং অ্যাপ :২০১৬ সালে মেসেজিং
কেবল বন্ধুদের কাছে এসএমএস পাঠানোর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। বরং এটি হয়ে উঠবে সব
ধরনের রোবটিক সাহায্য পাওয়ার উপায়ও।
সানফ্রান্সিসকো এলাকায় ফেসবুক মেসেঞ্জারের
পরীক্ষামূলক সংস্করণ ব্যবহারকারীরা কণ্ঠের নির্দেশে আশেপাশের কোন রেস্তোরাঁয় আসন
বুক দিতে পারেন। বন্ধুকে দেয়ার জন্য কিনতে পারেন উপহার। গুগলও একই ধরনের একটি
অ্যাপ বানানোর দিকে মনোযোগ দিয়েছে।
রোবটিক বুদ্ধিমত্তার বাইরেও অনেক কিছু যুক্ত হবে
মেসেজিং অ্যাপে। কারও সঙ্গে অ্যাপয়েন্টমেন্ট ঠিক করা, গেম খেলা,
বার্তা অনুবাদসহ অনেক কিছু সম্ভব হবে এবার।
নিরাপদ ও বুদ্ধিমান ড্রোন :সবাই আকাশ থেকে
তোলা ড্রোনের ছবি ভালোবাসে।
কিন্তু যেভাবে ড্রোনের ব্যবহার বাড়ছে, তাতে একে শিগগিরই হেলিকপ্টারের চেয়েও ক্যামেরার মতো মনে হবে বেশি। লিলি নামে একটি ড্রোন
নির্মাতা প্রতিষ্ঠান পানিরোধক ড্রোন বানাচ্ছে। আপনি যখন নৌকায় থাকবেন, সমুদ্রতীরে সেলফি নেবেন, তখন আপনাকে অনুসরণ করবে এ ড্রোন।
ইউএসবি টাইপ-সি পোর্ট :যে ইউএসবি পোর্ট আপনি
দেখে আসছেন,
সম্ভবত অপছন্দও করতেন, তা পরিবর্তিত হতে যাচ্ছে।
২০১৬ সালে, আরও ছোট ও দ্রুতগতির ইউএসবি টাইপ-সি পোর্ট আসতে যাচ্ছে। ইতিমধ্যেই অ্যাপলের
নতুন ম্যাকবুক ল্যাপটপ ও গুগলের নেক্সাস ৬পি মোবাইল ফোনে দেখা গেছে এ পোর্ট।
কণ্ঠের নিয়ন্ত্রণ সর্বত্র :হ্যাঁ, গ্যাজেট এ বছর শুনবে সবকিছু।
২০১৬ সালে কণ্ঠ-পরিচালিত ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রীতে
বুদ্ধিমত্তা ও নির্ভুলতা বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া যন্ত্র এবার আপনার সঙ্গে কথা বলবে আরও
স্বাভাবিকভাবে। বিশেষ করে টিভি, সাউন্ড সিস্টেম ও গৃহস্থালি ইলেক্ট্রনিক্স
যন্ত্রে এর প্রভাব থাকবে বেশি।
বহু লেন্স ও সেন্সরের ক্যামেরা :ছবির মান, ক্যাপচারের গভীরতা ও থ্রি-ডিতে দেখার ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য উন্নততর হচ্ছে
ক্যামেরার সেন্সর। যুক্ত হচ্ছে একাধিক লেন্স।
ইন্টেলের রিয়েলসেন্সের মতো কিছু ল্যাপটপ ও ট্যাবলেটে
ইতিমধ্যেই একাধিক সেন্সরযুক্ত ক্যামেরা বসানো হয়েছে। ক্যামেরায় মুখায়ব দেখে
লগ-ইন করার সুবিধা যুক্ত হবে।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের পরামর্শ, এখনই তাই দামি ডিএসএলআর কেনার দিকে ঝুঁকবেন না। একাধিক-লেন্স
প্রযুক্তির ক্যামেরার মাধ্যমে আপনি ভালো ছবি তুলতে পারবেন। আকার ও ওজনে সেসব
ক্যামেরা হবে আরও সুবিধাজনক।
স্বনির্ভর স্মার্টওয়াচ :বর্তমানে স্মার্টওয়াচ
হাঁটার সময় পদক্ষেপের সংখ্যা গোনা ও সময় বলা ছাড়া তেমন কিছুই করতে পারে না। তবে স্মার্টওয়াচের
নিজস্বতা দেখা যাবে এ বছর।
এসব ঘড়িতে এখন থাকবে ওয়্যারলেস, ফোন ও জিপিএস প্রযুক্তি।
ফলে ফিটনেস সচেতন ব্যক্তিরা পাবেন আরেকটু সুবিধা। এলজি ও স্যামসাং
সম্প্র্রতি সেলুলার ইন্টারনেট সুবিধাযুক্ত স্মার্টওয়াচ বাজারে ছেড়েছে। খুব শিগগিরই
স্মার্টওয়াচের সঙ্গে যুক্ত হবে ওয়্যারলেস প্রযুক্তিও।
গৃহস্থালি যন্ত্রে ইন্টারনেট :এখন গৃহস্থালি
যন্ত্রেও ইন্টারনেটের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। প্রিন্টার ও ওয়াশারের
মতো বিভিন্ন যন্ত্রে যখন কালি বা ডিটারজেন্ট শেষ হয়ে যাবে, তখন আপনা-আপনিই এটি অর্ডার দেবে। এমন প্রযুক্তি নিয়ে এসেছে অ্যামাজন। এছাড়া গুগলের নেস্ট
নামে আধুনিক ঘরে যেসব যন্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে, সেসবে ইন্টারনেট সংযোগ অপরিহার্য। যেমন, সিকিউরিটি লক, ফায়ার অ্যালার্ম, ইত্যাদি।
www.ittefaq.com.bd/science-&-tech/2016/01/08/50477.html
0Awesome Comments!